Breaking









Jun 1, 2024

দশম শ্রেণী ইতিহাস Dipendu Mondal




দশম শ্রেণী 

ইতিহাস

Dipendu Mondal 

 উপনিবেশিক শিক্ষা, রবীন্দ্রনাথ ও বিশ্বভারতী

-----------------

 প্রশ্ন-  রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা সম্পর্কে কি জানো?


প্রাণহীন ও যান্ত্রিক শিক্ষা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন যে ছেলেদের ভালোলাগা মন্দলাগা বলিয়া খুব একটা মস্ত জিনিস আছে। ছেলেদের মানুষ করে তোলার জন্য যে যন্ত্র তৈরি হয়েছে তার নাম স্কুল এবং সেটার মধ্য দিয়ে মানব শিক্ষার সম্পূর্ণতা হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ এই যান্ত্রিক শিক্ষা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন 

তার মতে ভারতে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে দেশের নাড়ীর কোন যোগ নেই। এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থা কেরানীগিরির কল হয়ে উঠেছে ,এর মধ্যে প্রাণের সাড়া নেই। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ এখানে হয় না। 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন ভাবনা


রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত কবি কিন্তু মানব জীবনের কোনো দিক নেই যেখানে রবীন্দ্র প্রতিবাদ ছোঁয়া লাগেনি। শিক্ষা সম্পর্কে তার কিছু নিজস্ব ভাবনা চিন্তা ছিল। এই উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম  এবং  বিশ্বভারতী। 


১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন আশ্রমে প্রতিষ্ঠা করলেন শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম বিদ্যালয়। এটি একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যালয়। শান্তিনিকেতন আশ্রমের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৬৩ সাল। তিনি রায়পুরের ভুবনমোহন সিংয়ের কাছ থেকে ভুবন ডাঙ্গা গ্রামে কুড়ি বিঘা জমি কিনে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল নিভৃতে আধ্যাত্মিক সাধনা করা। রবীন্দ্রনাথ নিজে কোন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেননি তিনি মহর্ষি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আশ্রমকে নিজ কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। 


শিক্ষার্থীর জীবন

তার এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল চতুরাশ্রম ও তপববনের আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এখানে শিক্ষার্থীদের পাদুকা ও ছাতা ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। তাদের সকাল সন্ধ্যা চেলি পড়ে উপাসনয়ে বসতে হতো। গায়ত্রী মন্ত্র ধ্যান করতে হতো। রান্না ছাড়া অন্য সব কাজ তাদের নিজেদের করতে হতো। পাঠ্যসূচির মধ্যে বাংলা ইংরেজি সংস্কৃত অংক ইতিহাস ভূগোল সবই ছিল। তাদের জীবনযাত্রা সরল গুরুসেবা অতিথি সেবা প্রভৃতি পূর্বকালের আশ্রমিক আদর্শে ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল লক্ষ্য। 


শিক্ষার উদ্দেশ্য


রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল মানুষ তৈরি করা। তিনি বলছেন মানুষ গড়ার শিক্ষা। মানুষ বলিতে যে যেমন বুঝি আছে সে সেই অনুসারেই মানুষের প্রণালী প্রবর্তন করিতে চাহিয়াছে। তিনি বলতেন যে শিক্ষককে লক্ষ্য রাখতে হবে ছাত্রদের মূল্যবান জীবন যেন শুকিয়ে না যায়। 


শিক্ষা প্রকৃতির কোলে


রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে শিক্ষা হবে মুক্ত প্রকৃতির কোলে মুক্ত আকাশের নিচে। চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি একটি খুবওয়ালা বড় বাক্স বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে মানুষের দুটি পরিবেশ একটি পরিবেশ সমাজ এবং অপর পরিবেশ হলো প্রকৃতি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শান্তিনিকেতনে গাছপালা এবং পাখিরা এই ছাত্রদের শিক্ষার হার নেবে। তার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে প্রভাতের আলো শ্যামল প্রান্তর এবং গাছপালা যেন শিশুদের অন্তর স্পর্শ করতে পারে। 


শিক্ষা আনন্দময়


রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে শিক্ষালাবের মধ্য দিয়ে আনন্দ লাভ শিক্ষার একটি আবশ্যিক শর্ত। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দকে মিলিয়ে দেওয়া রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতির একটা বৈশিষ্ট্য। 


শিক্ষা মানুষকে নিয়ে


মানুষকে বাদ দিয়ে শিক্ষা পরিপূর্ণতা পেতে পারেনা। তিনি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদের বিশ্ব প্রকৃতির কোলে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। 


বিশ্বভারতী 


রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা ও জীবন যাপন যেন অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে থাকে। তার শিক্ষা দরসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিন্তাধারা সমন্বয় দেখা যায়। তিনি 1921 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বভারতী। এর উদ্দেশ্য হলো প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শের ভিত্তিতে সর্ববিদ্যার প্রসার এবং বিশ্বমানব তৈরী। 



দশম শ্রেণী, স্বদেশ পরিচয় ও পরিবেশ , জীবন মুখোপাধ্যায়