DIPENDU
MONDAL
geographywithdip.blogspot.com
👉কৃষিকাজের ওপর মৌসুমী বৃষ্টিপাতের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর I
✅ ভারত একটি অন্যতম কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে শস্য উৎপাদনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। আবার, শস্য উৎপাদন অর্থাৎ চাষবাস প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুরোপুরি মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের ওপর নির্ভরশীল।
✅ মৌসুমি বায়ুর ওপর ভিত্তি করে ভারতে শস্যবর্ষ (crop calender) তৈরি হয়েছে। এজন্য বর্ষাকালে খরিফ শস্য, যেমন—ধান, পাট, চা, আখ, তামাক, রবার, তিল, তিসি প্রভৃতি উৎপন্ন করা হয়। অন্যদিকে শীতকালে রবি শস্য যেমন—গম, জোয়ার, বাজরা, ডাল, তৈলবীজ, আলু, সরষে, তুলো ইত্যাদি চাষ করা হয়।
✅ তবে কৃষিকাজে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের এতটা প্রভাব থাকলেও দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রকৃতি অনিশ্চিত ও অনিয়মিত। মৌসুমি বায়ুর এই খামখেয়ালিপনার কারণেই ভারতে খরা ও বন্যা নিত্যসঙ্গী।
1. খরার প্রভাব: মৌসুমি বৃষ্টিপাতের দেরিতে আগমন এবং এই বায়ুর প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত ঘটলে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জলসংকটের কারণে জলসেচ বাধা প্রাপ্ত হয়, মৃত্তিকা শুষ্ক হয়ে পড়ে, ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়।
2. বন্যার প্রভাব: মৌসুমি বায়ু দ্বারা অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা সৃষ্টি হয়। বন্যার জলে ফসল নষ্ট হয় অর্থাৎ উৎপাদন হ্রাস পায় এবং খাদ্যের অভাব ঘটে। সুতরাং, মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতীয় কৃষিকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।
DIPENDU MONDAL
geographywithdip.blogspot.com
ভারতীয় কৃষির সমস্যা এবং সমাধান সম্পর্কে আলোচনা কর I
ভারত কৃষিপ্রধান দেশ হলেও এর বেশ কিছু সমস্যা আছে। আবার যেমন সমস্যা আছে তেমন তার সমাধানও আছে।
সমস্যা
[1] মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা: মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে বর্ষাকালে অধিকাংশ ফসল উৎপন্ন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হিসেবে মৌসুমি বৃষ্টিপাত তার নির্ধারিত দিনের তুলনায় প্রায় 1 থেকে 2 সপ্তাহ পরে আসছে। তার জন্য ফসল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলের উৎপাদন কমে যায় ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
[2] ছোটো এবং বিচ্ছিন্ন কৃষিজোত: ভারতে কৃষিজোতগুলি ছোটো হওয়ায় ও জমি ভাগ করার সময় আল দেওয়ার ফলে কিছু জমি নষ্টও হয়। ছোটো জমিতে উন্নত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক চাষের সুবিধা না থাকায় উৎপাদন কম হয়।
[3] উন্নত ও সংকর বীজ এবং রাসায়নিক সারের অভাব: অধিক কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন উন্নত এবং সংকর বীজ। কিন্তু ভারতে এইসকল বীজ তৈরির জন্য উন্নত গবেষণাগারের অভাব আছে। তা ছাড়া এইসকল বীজের দাম এতটাই বেশি হয় যে, সাধারণ ও প্রান্তিক চাষিদের পক্ষে সবসময় তা জোগাড় করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া এধরনের কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের খুব প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজনীয়তাও অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার জন্য সবসময় যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় না।
[4] জলসেচের সুবন্দোবস্তের অভাব: বর্ষার সময় ছাড়া বছরের বাকি সময়ে কৃষিকাজের জন্য জলসেচ প্রয়োজন। কিন্তু ভারতের সমগ্র কৃষিভূমি জলসেচের সুবিধাভুক্ত না হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু অংশে এই কারণে মৃত্তিকার নিজস্ব গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গিয়ে কৃষিজমির উর্বরতা কমে গেছে।
[5] প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক উন্নতির অভাব: ভারতের কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তার প্রয়োগের অভাব দেখা যায়। প্রযুক্তির উদ্ভাবনের জন্য যে গবেষণাগারের প্রয়োজন, তার পরিকাঠামো এদেশে নেই। ফলে উন্নত যন্ত্রপাতি, সংকর বীজ, উন্নত রাসায়নিক সার ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত।
[6] শস্যের বাজারজাতকরণের অভাব: উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য ও অন্যান্য অর্থকরী ফসলের যথাযথ বিপণনের অভাব ভারতীয় কৃষির একটি প্রধান সমস্যা। কৃষকরা সরাসরি বাজারে ফসল বিক্রির সুযোগ না পাওয়ায় ফসলের উপযুক্ত দাম পায় না।
[7] কৃষিজ দ্রব্য সংরক্ষণের অভাব: ভারতীয় কৃষির অন্যতম দুর্বলতা হল উৎপাদিত দ্রব্য ও ফসলের যথাযথ সংরক্ষণের অভাব। প্রতিবছর ভারতে প্রায় 7% উৎপাদিত ফসল যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ ও প্রয়োজনীয় হিমঘরের অভাব, সংরক্ষণ-সংক্রান্ত প্রযুক্তির অভাব ভারতীয় কৃষির অন্যতম একটি সমস্যা।
[8] যথাযথ কৃষি প্রশিক্ষণ ও গবেষণার অভাব: ভারতে কৃষি প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত গবেষণার কাজ তুলনামূলকভাবে খুবই কম। পাশাপাশি কৃষি প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও সীমিত। কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পঠনপাঠনে ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ আগ্রহী নয়। তাই সামগ্রিকভাবে কৃষির অগ্রগতি বাধা পায়।
DIPENDU MONDAL
geographywithdip.blogspot.com
সমাধান
[1] সরকারি উদ্যোগ: কৃষি সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের বিশেষ প্রয়োজন। এর মধ্যে অন্যতম হল ফসল বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা। চাষিদের কাছ থেকে সরকার যদি সরাসরি ফসল কেনার ব্যবস্থা সর্বত্র চালু করতে পারে তবে চাষিরা ন্যায্য দাম পায় এবং বাজারেও মুদ্রাস্ফীতি ঘটে না।
[2] ক্ষুদ্রাকৃতি জমিজোতের সমাধান: ক্ষুদ্রাকৃতি জমিজোতগুলির সমাধানকল্পে জমিজোতগুলিকে সমবায় ফার্মের অধীনে এনে চাষের পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
[3] উন্নত সার ও বীজ-সংক্রান্ত গবেষণায় উৎসাহদান: উন্নত বীজ, সংকর বীজ তৈরি, রাসায়নিক সার উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গবেষণার পরিকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি আর্থিক সহায়তা দরকার।
[4] কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান: গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের অল্প সুদে কৃষিঋণ প্রদান, সার বীজ-যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে গ্রামীণ বিকাশ ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান স্থাপন। এ ছাড়া, কিষাণ বিকাশ পত্র, কৃষি সুরক্ষা যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমেও কৃষকদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয়।
[5] যথাযথ কৃষি পরিকল্পনা: কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়েই কৃষির ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপিত হয়েছিল। যার ফলশ্রুতি হিসেবে 1960-এর দশকে উত্তর-পশ্চিম ভারতের কয়েকটি রাজ্যে সবুজবিপ্লব ঘটে।
[6] কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি : বর্তমানে ভারতে প্রায় 2৪টি রাজ্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, 6টি স্বশাসিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাত্র একটি কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলি বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি, বিদ্যালয়স্তরের পাঠক্রমে কৃষি বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি এবং কৃষি গবেষণায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ভারতীয় কৃষির ভবিষ্যত আরও উন্নত করতে পারে।
DIPENDU
MONDAL
geographywithdip.blogspot.com