Class -10-History
Dipendu Mondal
1. বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?
মুদ্রণের ব্যাবসায়িক উদ্যোগে প্রথম দিককার যেসব বাঙালি পুরুষ সাফল্য
লাভ করেছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি স্বরবর্ণ ও
ব্যঞ্জনবর্ণগুলিকে সংস্কার করেন এবং তাদের আদর্শরূপ তুলে ধরেন 'বর্ণপরিচয়' প্রথম ও
দ্বিতীয় খণ্ডে। তিনি নতুন ধাঁচে বাংলা অক্ষর তৈরি করান এবং তা 'বিদ্যাসাগর সাট' নামে
পরিচিতি পায়। তিনি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় স্থাপন করেন সংস্কৃত প্রেস। শিক্ষা
সংস্কারের সঙ্গে ব্যাবসায়িক সাফল্য লাভ যে অসম্ভব নয়, তা তিনি প্রমাণ করেছেন।
2. রবীন্দ্রনাথ কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন ?
উত্তর- শিক্ষা-দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচক ছিলেন।
পাশ্চাত্যের ‘কেরানি তৈরির শিক্ষা’ তাঁর মনঃপূত হয়নি। ‘শিক্ষা সমন্বয়’, ‘তপোবন’, ‘শিক্ষার
হেরফের’, ‘তোতাকাহিনী’ প্রভৃতি প্রবন্ধ ও ছোটোগল্পে তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির চরম
সমালোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষ তৈরি করা”।
তিনি মনে প্রাণে ঔপনিষদীয় চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন। ঔপনিবেশিক শিক্ষার কেরানি
গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়তে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে বোলপুরে তিনি গড়ে তোলেন
ব্রহ্মচর্যাশ্রম। পরে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন।
3. উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির'-এরভূ মিকা কী ছিল?
উত্তর- উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের জন্য ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান সাধক
জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের রয়্যাল ইন্সটিটিউশনের আদলে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন 'বসু
বিজ্ঞান মন্দির'। তরুণতর বিজ্ঞানীদের সামনে বিশ্বমানের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করে দিতে
তিনি এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্রতী হন। এই বিজ্ঞান কেন্দ্র সম্পূর্ণ নিজের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে
বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ব্যবস্থা করে ও বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন
করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলা হয়।
4. বাঙালির অধিকাংশ ছাপাখানা যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল কেন?
উত্তর- ছাপাখানায় বাঙালির বাণিজ্যিক উদ্যোগের একটি লক্ষ্যণীয় দিক ছিল যৌথ
উদ্যোগ। এই সময় ছাপাখানার প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন মধ্যবিত্ত এবং পেশায়
শিক্ষক। এঁদের সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না। তাই ছাপার খরচ জোগানের জন্য তাঁদের
অংশীদারিত্বের পথে যেতে হয়, অথবা ধনীদের দ্বারস্থ হতে হয়। 'বাঙ্গাল গেজেটি-র
সম্পাদক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য- হরচন্দ্র রায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্থাপন করেন
'বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস'। বিদ্যাসাগর ও তাঁর বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘সংস্কৃত যন্ত্র'
প্রেসও যৌথ উদ্যোগের উদাহরণ।